বিসিএস পরীক্ষায় বিশ্ব রাজনীতি থেকে বহুমেরু বিশ্ব, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, জাতীপুঞ্জ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ।

 


এ পর্বের আলোচনায় আমরা সর্বপ্রথম বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে কথা বলবো।

বিশ্ব রাজনীতি: বিশ্বের স্বাধীন দেশ সমূহ যে পদ্ধতিতে একে-অপরের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মেনে চলে, কখনো দ্বন্দ্ব দেখা দিলে বিভিন্ন চুক্তি, সভা, সেমিনার বা সম্মেলনের আয়োজন করে সমস্যার সমাধান করে থাকে। আবার কখনো কখনো রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সংগঠন  তৈরি করে থাকে। যেমন: জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি। আবার সমস্যা সমাধানের জন্য  MOU বা APA এর মাধ্যমে স্বাক্ষর করে। এই বিষয় গুলি কে একত্রে বিশ্ব রাজনীতি বলে। তবে বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব রাজনীতিকে বিশ্বব্যবস্থাও বলা হয়।

 

এখানে আন্তরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিভিন্ন যুদ্ধ এটির অন্তর্ভুক্ত। এমনকি বর্তমান শরণার্থী সমস্যা যেমন রোহিঙ্গা সমস্যা,সন্ত্রাসবাদ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলা বিশ্ব ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্বের জনক ইমানুয়েল ওয়ালারস্টেইন।

 

যুগ বিভাগ: বিশ্ব ব্যবস্থার তিনটি যুগ বিভাগ রয়েছে। যথা:

১। বহুমেরু বিশ্ব (১৯৪৫ এর পূর্ব পর্যন্ত)

২। দ্বিমেরু বিশ্ব (১৯৪৫-১৯৯১)

৩। একমেরু বিশ্ব (১৯৯১-২০০১)

 

বহুমেরু বিশ্বের রাজনীতি:১৯৪৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে বহুমেরু বিশ্ব বা মাল্টিপোলার বলা হয়। এসময় আন্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম ও রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ হয়। এমনকি ভৌগলিক অবস্থান দখলকে কেন্দ্র করে বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- ১৬১৮ - ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপে ধর্ম ও রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ৩০ বছর ব্যাপী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধের কারণ ছিল নেতা হবে ধর্মীয় বা রাজনীতিবিদ। ১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এই ৩০ বছর ব্যাপী যুদ্ধের অবসান হয়। এজন্য ১৬৪৮ সালের পরবর্তী বিশ্বকে ওয়েস্টফেলিয়া বিশ্ব বলে ডাকা হয়।

 

এখন আপনাদের অনেকের মনে হতে পারে ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তি টা আবার কি?


ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তি: ইউরোপে ধর্ম এবং রাজনীতি নিয়ে ১৬১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিই হলো ওয়েস্টফেলিয়া শান্তি চুক্তি। এটি ১৬৪৮ সালের মে থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ: ১৮৫৩ - ১৮৫৬ সময়ে রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ হয়। কারণ ছিল তুরস্কের নিয়ন্ত্রিত দার্দানেলিস প্রণালী দিয়ে যুদ্ধ জাহাজ চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তাই তুরস্কের খ্রিস্টানদের রক্ষার অজুহাতে তুর্কির অটোমান সাম্রাজ্যে রাশিয়া আক্রমণ চালায়। ফলে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। (১৮৬২ সালে ইতালি ও ফ্রান্সের মধ্যে উত্তর আফ্রিকার দেশ কে কেন্দ্র করে যুদ্ধ হয়।)

 

যে কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়!

১৮৭০ সালে জার্মানি ফ্রান্স এর দুটি শহর আলসেস ও লরেন দখল করলে ইউরোপ দুই দিকে বিভক্ত হয়ে যায়। একদিকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। অন্যদিকে জার্মানি ও ইতালি। এই বিভক্তি থেকে ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় যা ১৯১৮ সালের ১১ ই নভেম্বর শেষ হয়।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী শান্তি প্রক্রিয়া:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব শান্তি স্থাপনের জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৪ দফা নীতি ঘোষণা করেছিলেন। যাকে একত্রে আন্তর্জাতিক ভাষায় self-determination বা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নীতি বলা হয়।

 

১৪ দফার ৮ নাম্বার দফায় বলা ছিল ফ্রান্সের শহর দুটি ফ্রান্সকে ফিরিয়ে দিতে হবে। ১৪ নং দফায় বলা ছিল প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংগঠন করা যেতে পারে। এই দফা অনুযায়ী ১৯১৯ সালে লীগ অফ নেশন বা জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২০ সালের ১০ ই জানুয়ারি এর কার্যক্রম শুরু হয়।

 

লীগ অফ নেশন এর কার্যক্রম: ইউরোপীয় অঞ্চলের শক্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সদস্য দেশ সমূহের মধ্যে আন্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি করে ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে আমেরিকা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য প্রায় সকল দেশই পর্যায়ক্রমে লীগ অফ নেশন এর সদস্য হয়ে যায়।

 

লীগ অব নেশনস এর ব্যর্থতা:

আমেরিকা এটির সদস্য না হওয়ায় জার্মানি এবং তার মিত্র দেশ সমূহ সদস্যপদ প্রত্যাহার করলে এই সংগঠন ব্যর্থ হয়। এর ব্যর্থতার কারণে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। এটি ১ সেপ্টেম্বরের ছিল।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ: ১৯৩৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের

অক্ষশক্তি ছিল (জার্মানি+ ইতালি + জাপান) এবং

মিত্রশক্তি ছিল (আমেরিকা+ ইংল্যন্ড+ রাশিয়া+ ফ্রান্স)। 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয় হয়। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জার্মানির প্রেসিডেন্ট হিটলার ও ইতালির প্রেসিডেন্ট মুসোলিনির মৃত্যু হয়। ফলে আমেরিকা এক আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

আমেরিকা বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাধা দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব ব্যবস্থা বহুমেরু থেকে দ্বিমেরু বিশ্বে রূপান্তরিত হয়।

 

আগামী পর্বে আমরা দ্বিমেরু বিশ্বের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করব। আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।

 

সবাই ভালো থাকবেন!

সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post