বিসিএস এক্সামে আন্তর্জাতিক থেকে মনরো মতবাদ, ট্রুম্যান মতবাদ, আয়রন কার্টন সমুদ্র রেখা, গোয়েন্দা বিমান U-2, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট, বার্লিন ব্লক


 

সিনো-সোভিয়েত স্নায়ু যুদ্ধ: যখন দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে যুদ্ধের যাবতীয় প্রস্তুতি বিদ্যমান থাকে এবং যুদ্ধের পরিবেশও বিরাজ করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ সংঘটিত হয় না। রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে এই থমথমে অবস্থা কে স্নায়ু যুদ্ধ বলে। এক্ষেত্রে প্রধান দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ না হয়ে তাদের অনুসারীদের সমূহের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে। অনুসারী দেশসমূহের যুদ্ধকে ছায়া যুদ্ধ বলে।

 

বিশ্বব্যাপী স্নায়ু যুদ্ধ: আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান স্নায়ু যুদ্ধটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু হয় 1991 সালে শেষ হয়। যার প্রধান দুটি দেশ ছিল আমেরিকা এবং রাশিয়া। এই স্নায়ু যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব। তবে বর্তমান বিশ্বে যেসব দেশ সমূহের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ চলমান সেগুলো নিম্নে দেওয়া হল -

প্রাচ্যে আমেরিকা ও ইরান এর মধ্যে যুদ্ধ

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান এর মধ্যে যুদ্ধ

ইউরোপে যুক্তরাজ্য ও (ফ্রান্স + রাশিয়া) এর মধ্যে যুদ্ধ

উত্তর আমেরিকায় আমেরিকা ও কিউবা এর মধ্যে যুদ্ধ

দক্ষিণ আমেরিকায় আমেরিকা ও ভেনুজুয়েলা এর মধ্যে যুদ্ধ

এসব স্নায়ুযুদ্ধের আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন: ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, জাতিগত দ্বন্দ্ব, শরণার্থী সমস্যা, সীমান্ত সমস্যা, সন্ত্রাসবাদ এবং আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি।

 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

 


মনরো মতবাদ: ১৮২৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো একটি নীতিমালা ঘোষণা করেন। যেখানে বলা ছিল "আমেরিকা নিজেকে কোন আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বে জড়াবে না। যদি অন্য কোন দেশ আমেরিকাকে জড়াতে চায় তাও আমেরিকা যুদ্ধে জড়াবে না।" এই মতবাদ মনরো মতবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদ নীতি নামে পরিচিত।

এই মতবাদকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুইটি নামে ডাকা হয়-

১। বিচ্ছিন্নতাবাদী মতবাদ(Policy of Isolation)

২। ঐক্যবদ্ধ মতবাদ(Policy of Integration)

পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার এই নীতি পাল্টে যায়।বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এর মতবাদ ছিল অন্যতম।

 

ট্রুম্যান মতবাদ: স্নায়ু যুদ্ধের শুরুতে ১৯৪৭ সালের ১২ই মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান আমেরিকার পার্লামেন্টে সমাজতন্ত্র বিরোধী এবং পুঁজিবাদের পক্ষে একটি বক্তৃতা করেছিলেন। এই বক্তৃতাকে ট্রুম্যান মতবাদ বলা হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ট্রুম্যান এর মতবাদকে Policy of Containment বলা হয়। এই ভাষণ এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সাগরের ভিতরে কিছু জায়গা একটি রেখা দ্বারা আবদ্ধ করে দিয়েছিল। রেখাটির নাম ছিল আয়রন পর্দা বা Iron Curtain.

আয়রন কার্টন: ট্রুম্যান এর সমাজতন্ত্র বিরোধী ভাষণ এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর ইউরোপের বাল্টিক সাগর এবং আদ্রিয়াটিক সাগরের মাঝে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে চতুর্দিকে একটি রেখা দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছিল। এই রেখাটির নাম ছিল আয়রন কার্টন বা লৌহ পর্দা।

 

গোয়েন্দা বিমান U-2: ১৯৬০ সালে আমেরিকার গোয়েন্দা বিমান কে সাগরের ভেতরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই যুদ্ধ জাহাজের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাইলট অবৈধভাবে আয়রন পর্দার নিয়ম ভেঙে রেখা অতিক্রম করার চেষ্টা করলে গুলি করে পাইলট সহ বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়। পাইলট সহ বাকি সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার পর আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে স্নায়ু যুদ্ধ আরো তীব্রতর হয়।

 


কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট: ১৯৫৯ সালে কিউবাতে বিপ্লবের মাধ্যমে বাতিস্তার সরকারকে উৎখাত করে ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতায় আসে। ১৯৬০ সালে ১৯ ডিসেম্বর কিউবাতে সমাজতন্ত্র চালু করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। ১৯৬১ সালের ৩ জানুয়ারি আমেরিকা কিউবার সাথে সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। পরবর্তীতে আমেরিকা  গোপনে তুরস্কে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে। তুরস্ক সোভিয়েত ইউনিয়নের খুব নিকটে অবস্থিত। পক্ষান্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবাতে আমেরিকা কে উদ্দেশ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে। এই ঘটনায় উভয় দেশ নিরাপত্তা হুমকি বিবেচনায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে নেয়। সম্পূর্ণ ঘটনাটি ১৯৬২ সাল জুড়ে চলেছিল। এই ঘটনা কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট নামে পরিচিত। এসময়ে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে এতই বেশি যোগাযোগ হয়েছিল যে উভয় দেশের মধ্যে একটি সরাসরি টেলিফোন হটলাইন চালু হয়েছিল।

 

বার্লিন ব্লক: স্নায়ু যুদ্ধের শুরুতে ১৯৬১ সালে জার্মানি দুই ভাগে ভাগ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি নাম ধারণ করে। পূর্ব জার্মানি রাশিয়া পন্থী এবং পশ্চিম জার্মানি আমেরিকা পন্থী হয়ে যায়। এই পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির ভেতরে রাশিয়া একটি দেয়াল তৈরি করেছিল যেটার নাম দেয়া হয়েছিল বার্লিন ব্লক। উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম জার্মানির পুঁজিবাদ যেন পূর্ব জার্মানিতে না আসতে পারে। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে দেয়াল ভেঙে ফেলা হয় এবং ১৯৯০ সালে দুই জার্মানি এক হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে বিশ্বব্যাপী স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়।

 

এই পর্ব এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন ! সবাইকে ভালো রাখবেন! ধন্যবাদ! 

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post