বিসিএস পরীক্ষায় দ্বিমেরু বিশ্বের রাজনীতি থেকে অর্থনৈতিক সংগঠন ERP, COMECON, সামরিক ন্যাটো (NATO) ও WARSAW গুরুত্বপূর্ণ

 


দ্বিমেরু বিশ্বের রাজনীতি: ১৯৪৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় পুঁজিবাদ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল তাকে ইতিহাসে দ্বিমেরু বিশ্ব বা স্নায়ু যুদ্ধ বা পূর্ব-পশ্চিম যুদ্ধ বা কোল্ড ওয়ার নামে ডাকা হয়।

 

যে কারণে এই সময়টাকে দ্বিমেরু বিশ্ব বলা হত।

একদিকে আমেরিকা তার নেতৃত্বে এই বিশ্বে পুঁজিবাদী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ সম্পত্তির মালিকানা হাওয়া, মুনাফা পাওয়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ সকলের থাকবে।


অন্যদিকে সোভিয়েট ইউনিয়ন এই বিশ্বে তাদের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ মুনাফা, ব্যবসা ও উৎপাদন সব কিছুই থাকবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে।

 

কেন এই সময়টাকে কোল্ড ওয়ার নামে ডাকা হয়?

এই সময়ে আদর্শের দ্বন্দ্ব কে কেন্দ্র করে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যুদ্ধের যাবতীয় প্রস্তুতি বিদ্যমান ছিল। তবে প্রকৃত পক্ষে যুদ্ধ হয়নি। এই জন্য এই থমথমে অবস্থাটাকে কোল্ড ওয়ার নামে ডাকা হয়।

 

এই সময়টাকে পূর্ব পশ্চিম এর দ্বন্দ্ব বলার কারণ

আমেরিকা পৃথিবীর পশ্চিমের দেশ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কিছুটা পূর্ব দিকের দেশ তাই এদের মধ্যে দ্বন্দ্বকে পূর্ব-পশ্চিম এর দ্বন্দ্ব নামে ডাকা হতো।

 

১৯৪৭ সালে তৎকালীন আমেরিকার পররাষ্ট্র সচিব জর্জ মার্শাল ERP নীতি গ্রহণের সময় সহযোগিতা করেছিলেন। এজন্য এ নীতির অপর নাম হচ্ছে মার্শাল পরিকল্পনা বা মার্শাল প্ল্যান।

 

ERP ( Europio Recovery Plan ) কি?

স্নায়ুযুদ্ধের শুরুতে আমেরিকা কর্তৃক পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার দেয়া হয়েছিল Europeo Recovery Plan (ERP)।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এটির বিকল্প হিসেবে যে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করে তার নাম দেয়া হয়েছিলো COMECON (Council Of Mutual Economic Assistance)।

আমেরিকার সংগঠন ERP এর তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন যে সংস্থা গঠন করেছিল তার নাম দেয়া হয়েছিল COMINFORM (Communist Information Bureau)। এ কারণে উভয় দেশের মধ্যে কিছুটা সমতা চলে আসে এবং স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে।

 

সামরিক জোট ন্যাটো: ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এর নির্দেশে এবং পাশাপাশি তৎকালীন আমেরিকার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ এর সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি ভান্ডেনবার্গ এর সুপারিশে বিশ্বের প্রথম সামরিক জোট ন্যাটো গঠিত হয়। যার ফুল ফর্ম হচ্ছে North Atlantic Treaty Organisation (NATO)।

 

ন্যাটো এর সদস্য দেশ সমূহ: প্রতিষ্ঠার এই সংগঠনের সদস্য ছিল ১২ টি দেশ। বর্তমানে এ সংগঠনের সদস্য ২৯। প্রতিষ্ঠার সময় সদরদপ্তর ছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। বর্তমান সদরদপ্তর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে।

অন্যদিকে সোভিয়েট ইউনিয়ন ন্যাটো এর বিকল্প হিসেবে ১৯৫৫ সালের ১৪ মে পোল্যান্ডের রাজধানী Warsaw তে ৮ দেশ নিয়ে যে সামরিক জোট গঠন করেছিল তার নাম দেওয়া হয়েছিল WARSAW PACT ।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উদ্দেশ্য ছিল নিজেদেরকে নিরাপত্তা দেয়া এবং পুঁজিবাদ প্রতিরোধ করা।

 

১৯৮১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন রোনাল্ড রিগ্যান। তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন না। চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন। তিনি স্নায়ুযুদ্ধ নিরসনে দুই টি নীতি গ্রহণ করেন।

১। ইয়েস পলিসি (Yes Policy)

২। স্মাইল ডিপ্লোমেসি(Smile Diplomacy )

পক্ষান্তরে তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন চেরেনকো। চেরেনকো মারা যান ১৯৮৫ সালে। তার মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট হন মিখাইল গর্বাচেভ। ১৯৮৭সালে গর্বাচেভ রুশ পার্লামেন্টে এক ভাষণের মাধ্যমে দুটি নীতি গ্রহণ করেন।

১। গ্লাস্তনস্ত (খোলামেলা আলোচনা )

২। প্রেরস্ত্রইকা (সংস্কার মূলক আলোচনা)

 

এই নীতি গ্রহণের ফলে ১৯৯১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে  ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যার একটি হল বর্তমান রাশিয়া। এই কারণে রাশিয়ার ক্ষমতা কমে যায়। আমেরিকা তথা পুঁজিবাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বব্যবস্থা দ্বিমেরু থেকে একমেরু বিশ্বে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালে আমেরিকা একক পরাশক্তি দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। 


আগামী পর্বে একমেরু বিশ্বের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবো। আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।

 

সবাই ভালো থাকবেন! সুস্থ থাকবেন ! নিরাপদে থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post