বিসিএস এক্সামে ফাইনান্সিয়াল অর্গানাইজেশন থেকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, আইবিআরডি, আইএফসি, আইডিএ, আইসিএসআইডি, মাইগা, এআইআইবি

 


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা বৈশ্বিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯১৮ সালে ১৪ দফা নীতি ঘোষণা করে। এই নীতির ১৪ নাম্বার দফা অনুযায়ী ১৯১৯ সালে লীগ অফ নেশন বা জাতিপুঞ্জ গঠিত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমেরিকা নিজেদের তৈরি করা লীগ অফ নেশন এর সদস্য হয়েছিল না।

 

জাতিপুঞ্জের কার্যাবলী:

১। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বিশ্ব শান্তি স্থাপন

২। আন্তরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্ব নিরসন

 

কিন্তু জার্মানি আমেরিকার এই চক্রান্ত বুঝতে পারে এবং সদস্যপদ প্রত্যাহার করে। ফলে লীগ অফ নেশন বা জাতিপুঞ্জ গঠিত হওয়ার কিছুদিন পর ব্যর্থ হয়। লীগ অফ নেশন ব্যর্থ হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন:

১। আমেরিকা জাতিপুঞ্জের সদস্য না হওয়া

 

২। জার্মানির সদস্যপদ প্রত্যাহার করা

 

৩। ১৯৩১ সালে চীন জাপান যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে জাপান চীনের একটি প্রদেশ দখল করে। সেক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না

 

৪। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হয় এবং বলেন "যুদ্ধই জীবন যুদ্ধই সার্বজনীন"।

 

৫। ১৯৩৬ সালে ইতালি এবং ইথিওপিয়া যুদ্ধ হয়। এ সময়ে ইথিওপিয়ার নাম ছিল আবিসিনিয়া। এই যুদ্ধে ইতালি আবিসিনিয়া দখল করে নেয়। এখানেও জাতিপুঞ্জ ব্যর্থ হয়েছে।

 

৬। পরিশেষে ১৯৩৯ সালে ১লা সেপ্টেম্বর ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে লীগ অব নেশনস স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

 


কিন্তু এই ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার বৈশ্বিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন চিন্তা শুরু করে। চিন্তাটি হলো কূটনীতি অবলম্বন করে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জয়লাভ করা। যুদ্ধের পর ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে আবার বৈশ্বিক আধিপত্য ফিরিয়ে নেয়া। আমরা জেনেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির অর্থাৎ আমেরিকা গ্রুপ এর জয় হয়েছিল। বলে আমেরিকা পুনরায় তাদের আধিপত্য ফিরে পেয়েছিল।

যেহেতু আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার চিন্তাভাবনা করেছিল সেহেতু সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের নাম ছিল ব্রিটন উডস সম্মেলন।

ব্রিটন উডস সম্মেলন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে আমেরিকার উদ্যোগে ১৯৪৪ সালের ১-২২ জুলাই আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের ব্রিটন উডস শহরে মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলের গোল্ড রুম (Gold Room) এ একটি সম্মেলন আয়োজন করে। এই সম্মেলন এর প্রকৃত নাম ছিল WFMSC (World Financial Management System Conference) বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্মেলন। এই সম্মেলনকে সংক্ষেপে শহরের নামে ব্রিটন উডস সম্মেলন নামে ডাকা হয়। কোন কোন আন্তর্জাতিক বিষয় এর তাত্ত্বিকগন এটিকে মাউন্ট কনফারেন্স বা গোল্ড কনফারেন্স নামেও ডেকেছে।

 

ব্রেটন উডস সম্মেলনের প্রস্তাবনা সমূহ:



১। ২য় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূহকে পুনরায় গঠন ও উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। যেটির নাম হবে বিশ্ব ব্যাংক বা World Bank

 

২। এই অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য আরও একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। যেটির নাম হবে IMF (International Monetary Fund )

 

৩। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আরও একটি সংগঠন তৈরি করতে হবে। যেটির নাম দেয়া হয়েছিল ITO (International Trade Organisation)

 

৪। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য আরও একটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব করা হয় যার নাম ছিল ICU (International Cleaning Unit).

 

সম্মেলনের শেষ দিন অর্থাৎ ২২ জুলাই ৪ টি প্রস্তাবনার প্রথম ২টি অনুমোদিত হয়। WB এবং IMF। এজন্য এই দুটি সংগঠন কে ব্রিটন উডস ইনস্টিটিউট নামে ডাকা হয়। পরের দুইটি অর্থাৎ ৩ নাম্বার এবং ৪ নাম্বারট প্রস্তাবনা ব্যর্থ হয়। ফলে এই দুটি সংগঠন কে ব্রিটন উডস ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান বলা হয়। শেষের দুটির অনুমোদন না দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিকল্প একটি ব্যবস্থা চালু করে। যেটির নাম দেয়া হয়েছিল Fixed Exchange Rate বা স্থির বিনিময় হার।

 

স্থির বিনিময় হার: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মুদ্রা বিনিময় হার সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য যে ব্যবস্থা আমেরিকা চালু করেছিল তাকে ফিক্স এক্সচেঞ্জ রেট বা স্থির বিনিময় হার বলা হয়।

 

বিশ্বব্যাংক(WB) এবং আইএমএফ(IMF) এর গঠন কাঠামো ও কার্যাবলী:


গঠন কাঠামো: বিশ্ব ব্যাংক পরিচালিত হয় বোর্ড অফ গভর্নর এর মাধ্যমে। এইজন্য বিশ্ব ব্যাংকের প্রধানের পদবী হচ্ছে "প্রেসিডেন্ট"। অপরদিকে IMF পরিচালিত হয় বোর্ড অফ ডিরেক্টর এর মাধ্যমে। এজন্য এর প্রধান এর পদবী হচ্ছে "ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর"। বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে

 

৫ টি সংস্থা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক পরিচালিত হয়। প্রতিটি সংস্থা গঠনের ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে-


১। IBRD(১৯৪৫): International Bank for Reconstruction and Development মূলত এটি হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।

 

২। IFC(১৯৫৬): International Finance Corporation শাখাটি এশিয়া মহাদেশের জন্য খোলা হয়েছিল।

 

৩। IDA(১৯৬০): International Development Association এই শাখাটি আফ্রিকা মহাদেশের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

 

৪। ICSID(১৯৬৬): International Centre Settlement of Investment Dispute বিনিয়োগের বাধা দূরীকরণ করার জন্য এই শাখাটি তৈরি করা হয়েছিল।

 

৫। MIGA(১৯৮৮): Multilateral Investment Guarantee Agency ক্ষতিপূরণ প্রদান করার জন্য এই শাখাটি তৈরি করা হয়েছিল।

 

কার্যাবলী: তিনটি রিপোর্ট এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক এবং IMF এর কার্যাবলী পরিচালিত হয়।

 

১। বিশ্ব অর্থনীতি (Global Financial Outlook)

২। মুদ্রা পরিস্থিতি (Global Financial Integrity)

৩। বিনিয়োগ ব্যবস্থা দেখাশোনা(Invest Management System)

 

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে চীন একটি ব্যবস্থা চালু করে সেটির নাম হচ্ছে AIIB = Asian Infrastructure Investment Bank

 

আজকের পর্ব এই পর্যন্তই । আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকবেন! নিরাপদে থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ! 

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post