ফাস্ট ওয়ার্ল্ড, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড, থার্ড ওয়ার্ড অর্গানাইজেশন থেকে জি-৫, জি-৭, জি-৮, ন্যাম, জি-৭৭, ডি-৮, ওপেক, ন্যাটো ইত্যাদি বিসিএস এক্সামে গুরুত্বপূর্ণ

 


ফাস্ট ওয়ার্ল্ড, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড এবং থার্ড ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন: ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল এর মধ্যে চতুর্থ তম যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে আরব দেশ সমূহ পশ্চিমা দেশে অর্থাৎ ইউরোপ আমেরিকাতে তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে ইজরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে বাধ্য হয়। পরিশেষে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। এজন্য বলা হয় আরব- ইজরাইলের চতুর্থ যুদ্ধে আরব দেশ সমূহ তেল অস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। তখন থেকে পশ্চিমা দেশ সমূহের এ ধরনের পরাজয় ভবিষ্যতে যেন না হয় সেই জন্য একটি সংগঠন তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরি জেসকার পেস্তা এর উদ্যোগে ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানি উপস্থিত থেকে একটি সংগঠন তৈরি করে। ১৯৭৪ সালে যার নাম ছিল Library Group (LG).

 

১৯৭৫ সালে ইতালি যোগ দিলে এর নাম হয় G-5

১৯৭৬ সালে কানাডা এবং জাপান এটিতে যোগ দিলে নাম হয় G-7

১৯৮৬ সালে এই সংগঠনে রাশিয়া যোগ দিলে এটির নাম হয় G-8

 

২০১৪ সালে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত হলেও এটির নাম পুনরায় G-7 হয়ে যায়। এটির কোন সদরদপ্তর নেই। বিশ্বের মোট জিডিপি এর ৩০% এই দেশগুলিতে উৎপাদন হয়।

 

OPEC = Organization of Petroleum Exporting Countries

 

OPEC: ১৯৬০ সালে ভেনিজুয়েলার উদ্যোগে এ সংগঠন গঠন করা হয়। এটির সদরদপ্তর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত। বিশ্বের মোট পেট্রোলিয়ামের 60% ওপেকভুক্ত দেশ গুলিই যোগান দেয়। এ সংগঠনের সদস্য দেশ ১২ টি।

 


NAM = Non-Aligned Movement

নন অ্যালাইন মুভমেন্ট: স্নায়ু যুদ্ধের শুরুতে ১৯৫৫ সালে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশ সমূহ স্বাধীন হলে তারা পক্ষ নেবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়ে। তারা আমেরিকা নাকি রাশিয়ার পক্ষে থাকবে নাকি উভয় দেশের পক্ষে থাকবে নাকি নিরপেক্ষ থাকবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরের প্রিয়নী দ্বীপে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, আফ্রো এশিয়া দেশসমূহের আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্নায়ুযুদ্ধের দুটি দেশের কোন একটির পক্ষে  অবস্থান নিলে অন্য পক্ষের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। যা দরিদ্র দেশ সমূহের জন্য ক্ষতিকর হবে। এজন্য উভয় দেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য বান্দুং সম্মেলনে নিরপেক্ষ থাকার নীতি ঘোষণা করা হয়। যার প্রেক্ষিতে NAM গঠন করা হয়। এখানে এই জোটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিরপেক্ষ থেকে সহযোগিতা আদায়ের আন্দোলন করা। এই সংগঠন গঠনের পেছনে অনেক নেতার অবদান রয়েছে। তাদের ভেতর থেকে কয়েকজন এর উদাহরণ দেয়া হলো

 

১। জওহরলাল নেহেরু - ভারত

২। ডঃ আহমেদ সুকর্ণ - ইন্দোনেশিয়া

৩। জামাল আবদেল নাসের - মিশর

৪। মার্শাল টিটো - যুগোস্লোভিয়া

৫। কাওয়ামী নক্রমা - ঘানা

 

NAM সংগঠনের কোন সদরদপ্তর নেই। তবে একটি বার্তা সংস্থা আছে। যার নাম NNN (NAM News Network)

 

D-8: ১৯৯৭ সালে ইস্তাম্বুল ঘোষণার মাধ্যমে ডি-এইট সংগঠন গঠিত হয়। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আটটি। ডি এইট এর সদরদপ্তর ইস্তাম্বুল, তুরস্ক। সদস্য দেশ সমূহ নিম্নরূপ:

১। মালয়েশিয়া

২। বাংলাদেশ

৩। পাকিস্তান

৪। নাইজেরিয়া

৫। ইন্দোনেশিয়া

৬। তুরস্ক

৭। মিশর

৮। ইরান

সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য একটি বাক্য মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাক্যটি

“মা বাবা নাই তুমিই সব”। প্রথম আটটি বর্ণ একটি দেশের নাম কি রিপ্রেজেন্ট করে। বাক্যটির মনে রাখতে পারলে দেশগুলোর নাম সহজে মনে করতে পারবেন।

 

G-77: এই সংগঠনটি জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনৈতিক সংগঠন। ১৯৬৪ সালে ৭৭ টি দেশ নিয়ে গঠন করা হয়। এ সংগঠনের কোন সদর দপ্তর নেই।

 

সামরিক জোট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এবং পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকা একটি সামরিক জোট গঠনের পরিকল্পনা শুরু করে। অপরদিকে আমেরিকার সামরিক জোট গঠন করার পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়। এভাবে স্নায়ুযুদ্ধে সামরিক প্রতিযোগিতা শুরু হয় যা ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। বর্তমানে সামরিক অপেক্ষা অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির প্রতিযোগিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

আমেরিকা কর্তৃক গঠিত সামরিক জোট সমূহ:


ন্যাটো: ১৯৪৯সালের ৪ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এর উদ্যোগে ১২ টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় ন্যাটো। ১২ টি দেশের মধ্যেউত্তর-পশ্চিমে ২টি(যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা) এবং উত্তর-পূর্বে ১০টি। 12 টি দেশের লিস্ট নিম্নে

১। আইসল্যান্ড

২। ইতালি

৩। ডেনমার্ক

৪। কানাডা

৫। বেলজিয়াম

৬। লুক্সেমবার্গ

৭। পর্তুগাল

৮। ফ্রান্স

৯। ইংল্যান্ড

১০। নেদারল্যান্ড

১১। নরওয়ে।

১২। আমেরিকা।

 

বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ২৯টি। সদরদপ্তর প্রথমে ছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। বর্তমানে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এ।

 

ANZUS: ১৯৫১ সালে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড এবং আমেরিকা নিয়ে ANZUS গঠিত হয়। এটি উদ্দেশ্য ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ওশেনিয়া মহাদেশের সমাজতন্ত্র প্রতিহত করা।

 

SEATO = South East Asia Treaty Organisation

১৯৫৪ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমাজতন্ত্র প্রতিহত করার জন্য আমেরিকা এটি গঠন করেছিল।

 

CENTO = Central Treaty Organisation

১৯৫৫ সালে মধ্য এশিয়ার দেশ গুলিকে নিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিহত করার জন্য আমেরিকায় গঠন করেছিল।

 

রাশিয়া কর্তৃক গঠিত সামরিক জোট:


১৯৫৫ সালে ১৪ইমে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ৮টি দেশ পোল্যান্ডের রাজধানী বর্ষাতে যে সামরিক জোট গঠিত হয় তার নাম ওয়ার্স প্যাক্ট। এটি গঠনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ সমতায় এসেছিল।

 

বর্তমানে ন্যাটো বাদে বাকি সামরিক জোট সমূহ এখন নেই। কারন ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে এই সব জোট বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ঝুঁকির কারনে আমেরিকা এখনো ন্যাটো সামরিক জোট কে টিকিয়ে রেখেছে।

 

আজকের পর্ব এ পর্যন্তই। আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি। সবাই ভাল থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post