ইউরোপের নব্য উপনিবেশিক রাজনীতি থেকে আফ্রো এশিয়া সম্মেলন, নর্থ সাউথ ডায়ালগ, নেপলিওনের সাম্রাজ্যবাদ, মুক্তবাজার অর্থনীতি গুরুত্বপুর্ণ।

 


নব্য উপনিবেশিক রাজনীতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউনাইটেড কিংডম তার দখলকৃত অঞ্চল সমূহ স্বাধীন করে দেয়। ফলে উপনিবেশিক দেশসমূহ স্বাধীনতা লাভ করে। এরই মধ্য দিয়ে নব্য উপনিবেশিক যুগ শুরু হয়।

 

পরোক্ষ শাসন: যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনা ছিল সরাসরি কোন অঞ্চল  বা দেশ দখল বা শাসন না করে কৌশলগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই জন্য এই ব্যবস্থাকে পরোক্ষ শাসনও বলা হয়।পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্য বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা কার্যকর করে। এই ব্যবস্থা প্রচলনের পেছনে উত্তরের ধনী রাষ্ট্র ও দক্ষিণে দরিদ্র রাষ্ট্রসমূহ উভয়ের স্বার্থ ছিল।‌

যেমন: উত্তরের ধনী রাষ্ট্র সমূহ দরিদ্র রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে হাতে রাখতে পারবে। অন্যদিকে দক্ষিণের  দরিদ্র রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সমস্যার সময় তাদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে পারবে।

 

উত্তরের ধনী রাষ্ট্র: উত্তরের ধনী রাষ্ট্র বলতে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশ কে বোঝানো হয়। ইউরোপের মধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি ও নেদারল্যান্ড অন্যতম।

 

দক্ষিণের দরিদ্র রাষ্ট্র: দরিদ্র রাষ্ট্রপতি চারটি মহা দেশকে বোঝানো হত। যেমন: দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়া।

 

এশিয়ার নতুন স্বাধীন দেশ সমূহ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম দশকে অর্থাৎ ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে এশিয়ার দেশ গুলি স্বাধীন হওয়া শুরু করে। নিম্নে কয়েকটি দেশের উদাহরণ দেওয়া হল:

ফিলিপাইন ১৯৪৬

 ভারত+পাকিস্তান ১৯৪৭

মালদ্বীপ+শ্রীলংকা ১৯৪৮

ইন্দোনেশিয়া ১৯৪৯

মালয়েশিয়া ১৯৫৭

 


আফ্রো-এশিয়া সম্মেলন: এভাবে এশিয়ার দেশগুলো স্বাধীন হওয়া শুরু করলে আফ্রিকার দেশ সমূহ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে আলোচনার জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলনের নাম ছিল "আফ্রো-এশিয়া সম্মেলন (Afro-Asia Conference)"। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে আফ্রিকার দেশ সমূহ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে সেই আলোচনা এবং সর্বোপরি আফ্রো-এশিয়া উভয়ের দেশসমূহের উন্নয়ন হবে সেই সম্পর্কে আলোচনা।

পরবর্তী দ্বিতীয় দশকে অর্থাৎ ১৯৫৫ - ১৯৬৫ সালে আফ্রিকার দেশ সমূহ স্বাধীন হওয়া শুরু করে। এমনকি ১৯৬০ সালে একই বছরে আফ্রিকার প্রায় ২৫ টি দেশ স্বাধীন হয়। এজন্য এই বছরকে আফ্রিকার বছর (Year of Africa)বলা হয়।

১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড ম্যাকমিলান। তিনি স্বাধীনতার প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন।

 

নব্য উপনিবেশ: নব্য স্বাধীন দেশ সমূহের অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার জন্য উত্তরের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। অপরদিকে উত্তরের দেশ গুলিরও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই জন্য তারাও সহযোগিতার মাধ্যমে যে ব্যবস্থা গড়ে তোলে তার নাম নব্য উপনিবেশ।

উত্তর দক্ষিণের এই সহযোগিতা যৌক্তিক করার জন্য ১৯৭২ সালে একটি সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল যার নাম ছিল NSD ( North South Dialogue)। এই সংলাপের ঠিক দুই বছর পর উত্তর দক্ষিণে সহযোগিতা আধুনিক করার জন্য ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। এই প্রস্তাবের নাম ছিল নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ইংরেজিতে যেটার সংক্ষিপ্ত ও পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে

 NIEO (New International Economic Order)।

 


ব্যাখ্যা: এভাবে নব্য উপনিবেশ দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে। উত্তরের দেশ গুলির সাহায্য প্রদান এবং দক্ষিণে দেশগুলির সাহায্য গ্রহণের ফলে যে ব্যবস্থা তৈরি হয় তার নাম সাম্রাজ্যবাদ। এখানেও দরিদ্রের উপর ধনীদের শাসন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিলো। ধনীরা ধীরে ধীরে অধিক ধনী হতে ছিল পক্ষান্তরে দরিদ্ররা আরো দরিদ্রে পরিণত হয়েছিল। ১৬ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত স্পেন, পর্তুগাল ও মেক্সিকো সম্পূর্ণ দক্ষিণ আমেরিকা শাসন করত। আবার অন্যদিকে ১৮ থেকে ২০ শতক পর্যন্ত ইউরোপের কয়েকটি শক্তিশালী দেশ যেমন: ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়াম আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক অঞ্চল শাসন করতো। নেপোলিয়ান সর্বপ্রথম সাম্রাজ্যবাদ ব্যবহার করেন। আগামীতে সময় পেলে সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

 

এই সাম্রাজ্যবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো আশির দশকে যে নতুন ব্যবস্থা চালু করে তার নাম গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন। বিশ্বায়ন হচ্ছে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা।

 

মুক্তবাজার অর্থনীতি: ১৯৯১ সালের ১লা জুলাই আমেরিকা কর্তৃক বিশ্বায়নের প্রধান উপাদান মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হয়। সাধারণ অর্থে মুক্তবাজার বলতে সকল দেশের পণ্য সকল দেশে প্রবেশ করার অধিকার। সেখানে কিছু শুল্কহার থাকবে। এভাবে মুক্তবাজারের মাধ্যমে ব্যবসা করে অর্থনীতি চাঙ্গা করে ধনী দেশগুলো বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠিত রাখে। বিশ্বায়নের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ প্রথা চালিয়ে যায়।

 

আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের পর্ব এখানে শেষ করছি।

সবাই ভাল থাকবেন ! নিরাপদে থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post