তত্ত্ব বা থিওরী বিসিএস এক্সামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিবারেলিজম, নিও লিবারেলিজম, মার্কসিজম, গঠনবাদ, ফাংশনালিজম, গেম থিওরি, ডোমিনো থিওরি


 

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তত্ত্বের ব্যবহার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব ব্যবস্থায় আন্তরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্ব, ভৌগলিক সমস্যা নিয়ে যুদ্ধ, ধর্মকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ, সীমান্ত সমস্যা, জাতিগত দ্বন্দ্ব, শরণার্থী সমস্যা, অভিবাসন সমস্যা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এমনকি জলবায়ু ঝুঁকি নিরসন করার জন্য আন্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং সংলাপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় কিন্তু গণতান্ত্রিক কাঠামো না থাকায় ১৯২০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এই নামে একটি সাবজেক্ট খোলা হয়। পরবর্তীতে "প্যারিস স্কুল অফ ইকোনমিক্স" নামে একটি ডিসিপ্লিন চালু হয়।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এই সাবজেক্ট চালু হয়। এইভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে, নীতিমালা নির্ধারণে এবং পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব তত্ত্বের প্রয়োগ শুরু হয়।

 

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তত্ত্বের ব্যবহারের উদ্দেশ্য:

১। রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের কাঠামো তৈরি (স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসি)

২। আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার পরিপালন

৩। কূটনীতির প্রয়োগ এবং কূটনীতিকের দক্ষতা অর্জন

৪। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষন

৫। দ্বন্দ্ব নিরসনের পদ্ধতি বের করা

৬। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজ দেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা

৭। আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্মেলন, সভা, সেমিনার ঘোষণা এবং সমঝোতা ইত্যাদি নির্মাণ

 


আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে সকল তত্ত্ব প্রচলিত তা নিম্নরূপ:

রিয়ালিজম বা বাস্তববাদ: বাস্তববাদী তত্ত্বের তাত্ত্বিক হলো Anthony Giddens। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো বাস্তবতার নিরিখে সমস্যার সমাধান এবং ইস্যু তৈরি করা। বাস্তবে আমরা যেসব সমস্যর সম্মুখীন হয় সেই সমস্যা গুলোর সমাধান যেভাবে করা যায় সেটি খুজে বের করাই হচ্ছে রিয়েলিজম বা বাস্তববাদ। রিসেন্ট উদাহরণ: সম্প্রতি তুরস্ক সরকার বাংলাদেশে অস্ত্র উৎপাদন করতে আগ্রহী হয়েছে।

 

লিবারেলিজম বা উদারতাবাদ: এই তত্বের তাত্ত্বিক হচ্ছেন জর্জ সুজ(George Sultz) ও হারবার্ট মেইন(Herbert Meinen)। এটার মূল বিষয় হচ্ছে আন্তরাষ্ট্রীয় এবং আন্ত দলীয় সমঝোতা। নৈরাজ্যবাদ হচ্ছে এই উদারতার একটি ফলাফল। বেশি উদার হলে নৈরাজ্যবাদ দেখা দিতে পারে। এইজন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমোঝোতার জন্য যতটুকু উদার হলে পার্ফেক্ট হয় ততটুকুই উদার হতে হবে।  

 

নিও লিবারেলিজম বা নব্য উদারতাবাদ: এই তত্বের তাত্ত্বিকের নাম হচ্ছে আলথিউসেন(Althusen)। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো রাস্ট্র, দল এবং জনগণ সবাইকে নিয়ে এই তথ্য কাজ করে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, দলের স্বার্থে এবং জনগনের স্বার্থে কাজ করা সহজ নয়। তাই এই তত্বের সুবিধা হল বৃহৎ অংশগ্রহণে এই তত্ত্ব সহজে কাজ করতে পারে।

 

মার্কসিজম বা মার্কসবাদ: অর্থনীতি সবকিছুর চালিকাশক্তি। কাল মার্কস নিজেই এই তত্বের তাত্ত্বিক। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো- অর্থনীতির কারণে শ্রেণী বৈষম্য তৈরী হয় অর্থাৎ বুর্জোয়া-শ্রমিক বৈষম্য তৈরি হয়। বুর্জোয়াঃ উৎপাদনের উপকরণের মালিক। শ্রমিকঃ উপকরণ ব্যবহার করে পন্য উৎপাদন করে।

কালমার্কস বলেছেন- “মানব সমাজের ইতিহাস হল শ্রেণী(ধনী-গরীব) সংগ্রামের ইতিহাস”। কাল মার্কসের মৃত্যুর পর যারা কাল মার্কসের এই আদর্শকে ধারণ করে তত্ত্ব চালিয়ে যাচ্ছে তাদের আদর্শকে বলা হয় নব্য মার্কসবাদ।

 


কন্সট্রাকটিভিজম বা গঠনবাদ: এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে সাংগঠনিক ভাবে কাজ করতে হবে।

 

ফাংশনালিজম বা ক্রিয়াবাদ: এ তত্ত্বের তাত্ত্বিক হল আর কে মার্টন (R K Marton) এবং টি পারসন (T Person)। এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে- কোন কিছুই অর্থহীন নয়।

 

পোস্ট মর্ডানিজম বা উত্তর আধুনিকতাবাদ: এই তত্বের তাত্ত্বিক হচ্ছেন Zigmund Bouman এবং Mercuse। এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে স্বার্থ এবং যুক্তির বাইরে কোনো কিছু হবে না।

 

গেম থিওরি: এটাতে মূল কথা হচ্ছে যে কোন উপায়ে রাষ্ট্রের সফলতা অর্জন করা।

 

ডোমিনো থেওরি: স্নায়ু যুদ্ধের সময় আমেরিকার নেতৃত্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চালু করলে অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করে। ফলে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে একটা ব্যালেন্স তৈরি হয়।

আজকের পর্ব এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে ইউরোপিয়ান পলিটিক্স নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন! নিরাপদে থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post