বিসিএস এক্সামে একমেরু বিশ্বের রাজনীতি থেকে টুইন টাওয়ার এ সন্ত্রাসী হামলা, আমেরিকা ও ইরাক যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ।

 


একমেরু বিশ্বের রাজনীতি: ১৯৯১ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। ১৫ টি রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হচ্ছে বর্তমান রাশিয়া। ফলে বিশ্ব রাজনীতি একমেরু বিশ্বে পরিণত হয়। এ সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ বুশ সিনিয়র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বরিস ইয়েলৎসিন (Boris Yeltsin)।

 

একমেরু বিশ্বে আমেরিকার ব্যর্থতা: ১৯৯১ সালে আমেরিকা একক পরাশক্তি দেশ হয়েও ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি হয় একারণে বলা হয়। এ কারণে বলা হয় আমেরিকার একমেরু বিশ্বের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১০ বছর। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আমলে বা যার নীতিমালার কারণে আমেরিকা একক পরাশক্তি হতে পেরেছিল সেই প্রেসিডেন্টের নাম রোনাল্ড রিগ্যান। তার সময়কাল ছিল ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত। এজন্য রিগ্যান এর শাসনামলকে বলা হয় "রিগ্যান ভিক্টোরি স্কুল"।

 

দীর্ঘ ৭৩ বছরের পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ১৯৯১ সালে বাস্তবায়ন হলেও ১০ বছরের মধ্যে সেটি স্তিমিত হয়ে যায়। তাই আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।

 

২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউইয়র্ক এর বহুতল বাণিজ্যিক ভবন টুইন টাওয়ার এ সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমেরিকার পরাশক্তিতে সমস্যা শুরু হয়। এ সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ বুশ জুনিয়র। প্রেসিডেন্ট রাশিয়াকে সন্দেহ করে FBI এবং CIA সংস্থা দুটিকে দায়িত্ব দেন। FBI ও CIA হল আমেরিকার দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। যার ফুল ফর্ম হচ্ছে-

FBI ( Federal Bureau of Investigation )

CIA ( Central Intelligence Agency )

 

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিলো- এ ঘটনা আফগানিস্তান ভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা "আল-কায়েদা"  করেছে। যার প্রধান ছিল "ওসামা বিন লাদেন"। (পরবর্তিতে আমেরিকা ওসামা বিন লাদেন কে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করে। অবশেষে ২০১৭ সালে ৩মে পাকিস্তানে লাদেন কে হত্যা করে আমেরিকা।)

 

২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমেরিকা সরকার একটি নীতিমালা প্রদান করেন। নীতিমালার নাম হচ্ছে War or Terror । তিনি তিনটি দেশকে শয়তানের দল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ইংরেজিতে যেটাকে অ্যাক্সিস অফ এভিল (Axis of Evil ) বলা হয়। তিনটি দেশ হচ্ছে ইরাক, ইরান ও উত্তর কোরিয়া। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই তিন দেশের কেউ আক্রমণ করেছিলো না।

 


২০০৩ সালের ২০ মার্চ আমেরিকা ও ইরাক যুদ্ধ শুরু হয় আমেরিকা এই যুদ্ধের নাম দিয়েছিল "অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম-২০০৩" (Operation Iraqi Freedom-2003)। যুদ্ধের পূর্বে আমেরিকা বলেছিল ইরাকের কাছে মারণাস্ত্র রয়েছে। এই অজুহাতে আমেরিকা ইরাকের উপর আক্রমণ শুরু করে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য হ্যান্ড ব্লেক এর নেতৃত্বে জাতিসংঘের একটি দল ইরাক সফর করে। এই সফরের নেতৃত্ব দিয়েছিল জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা IAEA (Interaction Atomic Energy Agency)। এটার সদরদপ্তর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত।

 

জাতিসংঘের নির্দেশনা অমান্য করে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করেছিল। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার আমেরিকার পক্ষে ছিল।

 

২০০৩ সালে আমেরিকা ইরান আক্রমণের ঘোষণা দিলে চীন ও রাশিয়া বাধা প্রদান করে। এ কারণে আমেরিকা ইরান আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে। আমেরিকার পরাশক্তির দুর্বলতা এখান থেকে প্রকাশ পেতে শুরু করে।

 

২০১৬ সালের ১৫ই জুলাই আমেরিকা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়। এ সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। 

 

আমেরিকার পার্শ্ববর্তী দেশ কিউবা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্র অনুসরণ করে বলে আমেরিকার সাথে কিউবার বহুদিনের বিরোধ রয়েছে। বিরত থাকা সত্বেও বারাক ওবামা ২০১৬ সালে কিউবার সাথে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করে। এ কারণে মার্কিন রাজনীতি চাপের মুখে পড়ে যায়।

 

২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন "আই উইল মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (I will make America great again)"। এই ভার্সনের পরে আমেরিকার দুর্বলতা বিশ্বব্যাপী প্রকাশ পায়। যেহেতু পুনরায় গঠন করতে চায়। তারমানে বর্তমানে সমস্যা আছে এইটা সবাই বুঝে যায়।

 

বর্তমান বিশ্বকে বলা হয় দ্বিমেরু কেন্দ্রিক বহুমেরু বিশ্ব। আজকের পর্ব এই পর্যন্তই। আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।

 

সবাই ভালো থাকবেন!

সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post