ওয়ার্ল্ড বিসনেস অর্গানাইজেশন থেকে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারস অফ কমার্স, সুইফট সফটওয়্যার, প্রফর্মা ইনভয়েস, লেটার অফ ক্রেডিট, মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ

 


ওয়ার্ল্ড বিজনেস এবং বিজনেস অর্গানাইজেশন

ওয়ার্ল্ড বিজনেস: প্রাচীনকাল থেকেই আন্ত:রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সম্পাদিত হয়ে আসতেছে বিভিন্ন রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে। এক সময় বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্য বিনিময় হত। এটাকে বলা হয় বার্টার সিস্টেম বা পণ্য বিনিময়। সাধারণত বৈদেশিক বাণিজ্য দুইভাবে হয়ে থাকে। একটি আমদানির মাধ্যমে এবং অপরটি রপ্তানির মাধ্যমে। বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শ্রম ক্রয় বিক্রয় করা হয়। যেমন: মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক আছে। সেখান থেকে তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নিজের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রেরণ করে। আবার বিপরীতক্রমে পদ্মা সেতুতে চাইনিজ প্রকৌশলীদের বেতন পরিশোধ করা হয় ডলারের মাধ্যমে। এভাবে শ্রম ক্রয়-বিক্রয় প্রথা চলতেছে। এই সকল ক্রয়-বিক্রয় সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা রয়েছে। সে গুলোকে বিজনেস অর্গানাইজেশন বলা হয়।

 

বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা: এখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নিয়ে আলোচনা করব।

 

১। International Chambers of Commerce(ICC): এটি ১৯১৯

সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নীতিমালা প্রণয়ন, বাধা দূরীকরণ, ঝুঁকি নিরসন এবং আন্ত:রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা।

সদর দপ্তর: এটির সদরদপ্তর ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত। বিশ্বের যেসকল দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সমূহ ICC এর সদস্য, তারা বৈদেশিক বাণিজ্য করতে পারে। FBCC হচ্ছে বাংলাদেশের মূল ব্যবসায়িক সংগঠন।

 


ICC এর নীতিমালা সমূহ: বৈদেশিক বাণিজ্যে সকল দেশের এই যে নীতি অনুসারে ব্যবসা করতে হয় সেটির নাম UCPDC-600। এটির ফুল ফর্ম হচ্ছে Uniform Custom and Practices for Documentary Credit। এখানে ৬০০ হচ্ছে পাবলিকেশন নাম্বার। সংক্ষেপে এটিকে UCP-600 বলা হয়।

 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান যে বিষয়গুলো প্রয়োজন:

১। দুটি দেশ

২। ২ ব্যবসায়ী

৩। ব্যাংক একাউন্ট

৪। ইন্সুরেন্স কম্পানি

৫। জাহাজ

৬। সুইফট সফটওয়্যার

৭। বন্দর

৮। কুরিয়ার সার্ভিস

 

১। দুটি দেশ: কমপক্ষে দুটি দেশ থাকবে। সেটা হতে পারে বাংলাদেশ এবং চায়না অথবা অন্য যে কোন দুটি দেশ। যাদের ভেতরে পণ্য আদান-প্রদান হবে।

 

২। ২ ব্যবসায়ী: দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাবসায়ী থাকবে।যাদের একজন আমদানি করবে অন্য আরেকজন রপ্তানি করবে।

 

৩। ব্যাংক একাউন্ট: উভয় প্রতিষ্ঠানের দুটি ব্যাংক একাউন্ট থাকবে। আমদানিকারক(ক্রেতা) এর ব্যাংক কে বলা হয় ইস্যুইং ব্যাংক (Issuing Bank) এবং রপ্তানিকারক(বিক্রেতা) এর ব্যাংকে বলা হয় অ্যাডভাইজিং ব্যাংক(Advising Bank)।

 


৪। ইন্সুরান্স কম্পানি: প্রতিটি আমদানি-রপ্তানির সাথে ইন্সুরেন্স কোম্পানি সম্পৃক্ত থাকবে। ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে ইন্সুরেন্স এর কাছ থেকে কিছুটা সাহায্য পাওয়া যাবে। এমন ইন্সুরেন্স যদি আদান-প্রদানের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারকের ভরসা বৃদ্ধি পায়।

 

৫। জাহাজ কম্পানি: এখন অধিকাংশ ট্রানজেকশন পানিপথে হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি পণ্য আদান-প্রদান করা যায় এবং খরচ অনেক কম হয়। এজন্য নদী পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য ভালো এবং নির্ভরযোগ্য জাহাজ কোম্পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

৬। সুইফট সফটওয়্যার: অনেক সময় নিরাপত্তা জনিত কারণে সমস্যা ঘটে থাকে। এগুলো সিকিউরিটি কম থাকার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। বর্তমানে ভালো সিকিউরিটি প্রদান করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সুইট সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। এটির মাধ্যমে কিছু সংকেত সেট করা যায়, যে এটি আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারক এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য কেউ সেটা বুঝতে পারবে না। যদি রপ্তানিকারক অন্য কাউকে এটির অ্যাক্সেস দিতে চায়, তাহলে সে বুঝতে পারবে। অন্যথায় বুঝতে পারবে না। এটি বেলজিয়াম ভিত্তিক একটি সফটওয়্যার।

SWIFT = Society for World wide Inter Bank Financial Telecommunication

 

৭। বন্দর কর্তৃপক্ষ: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা থাকবে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয় নদী বন্দর অথবা বিমানবন্দর এর মাধ্যমে। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ।

 

৮। আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস: প্রতিটি আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস এর সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। যেটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুর তদারকি করবে।

 

Proforma Invoice (PI): আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দুইজন ব্যবসায়ী প্রথমে তাদের মধ্যে যে চুক্তি করে তাকে প্রফর্মা ইনভয়েস বলে। যদি মালিকপক্ষ চুক্তি না করে তার কোন প্রতিনিধি করে, তাহলে তাকে ইনডেন্ট বলে। এখানে পণ্যের পরিমাণ এবং মূল্য সহ যাবতীয় সব কিছু উল্লেখ করতে হয়।

 


Letter of Credit(LC): লেটার অফ ক্রেডিট হচ্ছে আমদানিকারকের ব্যাংকের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তার অঙ্গীকার পত্র। এটিকে আন্তর্জাতিক ভাষায় ডকুমেন্টারি ক্রেডিট (DC) বলে থাকে। আবার কখনো কখনো শুধু ক্রেডিটও বলা হয়। এই অঙ্গীকারনামা প্রেরণ না করলে ব্যাংক রপ্তানিকারকের ব্যাংকে পেমেন্ট করতে পারে না।

মালামাল জাহাজে তুলে দেওয়ার পর যাবতীয় দলিলপত্র কুরিয়ার সার্ভিসে ব্যাংক বরাবর অর্থাৎ আমদানিকারক(ক্রেতা) এর ব্যাংক বরাবর প্রেরণ করতে হবে। এই ডকুমেন্টে পণ্যের যাবতীয় ইনফরমেশন দেয়া থাকবে।

যাবতীয় ডকুমেন্ট ব্যাংকে পৌঁছালে সেটিকে চেক করার জন্য ব্যাংক ৫ কর্মদিবস সময় পাবে। ডকুমেন্ট এর সবকিছু ঠিক থাকলে ব্যাংক কনফার্মেশন করে ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই বিক্রেতার ব্যাংক বরাবর মূল্য পরিশোধ করতে হবে। আর যদি ডকুমেন্ট ঠিক না থাকে তাহলে মূল্য পরিশোধের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ডকুমেন্ট এ কি কি ভুল আছে সেটি বিক্রেতার ব্যাংকে জানাতে হবে। যদি না জানানো হয় তাহলে ডকুমেন্টের সবকিছু ঠিক আছে বলে মেনে নেওয়া হবে।

 

মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি: আমদানিকারক (ক্রেতা) এর ব্যাংক রপ্তানিকারক (বিক্রেতা) এর ব্যাংকে যে হিসাবের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে তাকে Nostro  এবং রপ্তানিকারক যে হিসাবের মাধ্যমে পণ্য পাঠায় তাকে Vostro বলে।

 

আজকের পর্ব এই পর্যন্তই। আগামী পর্বের আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।

সবাই ভালো থাকবেন! নিরাপদে থাকবেন! সুস্থ থাকবেন!  ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post