রিজিওনাল অর্গানাইজেশন থেকে বেনেলাক্স, লাফটা, ইফটা, ক্যারিকম, নাফটা, বিমসটেক, অ্যাপেক ইত্যাদি বিসিএস এবং চাকুরি পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ

 


রিজিওনালিজম বা আঞ্চলিকতাবাদ: একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে দেশসমূহের মধ্যে পারস্পারিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সংগঠন, চুক্তি, নীতিমালা, ঘোষণা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে যে ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে একত্রে রিজিওনালিজম বা আঞ্চলিকতাবাদ বলা হয়। সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনিয়োগ এর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা টিকে থাকে। যখন একই অঞ্চলের সকল দেশ একে অপরের প্রতি প্রতিযোগিতামূলক না হয়ে সহযোগিতামূলক হয় তখন সেটিকে উদারীকরণ বলা হয়।

 

রিজিওনাল অর্গানাইজেশন: নিচে কয়েকটি রিজিওনাল অরগানাইজেশন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১। BENELUX

২। LAFTA

৩। EFTA

৪। CARRICOM

৫। NAFTA

৬। BIMSTEC

৭। APEC

৮। TPP

এবার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

 


১। BENELUX: ১৯৫৮ সালে ইউরোপের তিনটি দেশ তথা বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গ তাদের নিজেদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করার জন্য এই সংগঠন গড়ে তোলে। এর সদস্য দেশ ৯টি।

 

২। LAFTA: ১৯৬০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি নিজেদের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটির পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে Latin America Free Trade Agreement (LAFTA).

 

৩। EFTA: ১৯৬০ সালে এ সংগঠনটি চালু হয়। ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে দেশগুলি অন্যান্য মহাদেশের দেশগুলিতে মুক্ত বাণিজ্য করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এই সংগঠনটি পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে  European Free Trade Area(EFTA)

 

৪। CARRICOM: ১৯৭৩ সালে ক্যারিবিয়ান সাগরে ভাসমান ১৩টি দ্বীপরাষ্ট্র গড়ে ওঠে। ফলে এই অঞ্চলে একটি সাধারন বাজার ব্যবস্থা চালু হয়। যাতে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশ গুলি এই বাজারে বিনিয়োগ করলে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলো উন্নত হবে। এই সংগঠনের ইংরেজিতে পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে Caribbean Common(CARRICOM).

 

৫। NAFTA: স্নায়ুযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ১৯৯১ সালে আমেরিকার তত্ত্বাবধানে চালু হয় মুক্তবাজার অর্থনীতি অর্থাৎ মুক্ত বাণিজ্য নীতি। এটি হলো শর্তবিহীন সবার সাথে সবার বাণিজ্য। এসময় আমেরিকা তার অঞ্চলে তিনটি দেশ নিয়ে ১৯৯৩ সালে এই সংগঠন গঠন করে। ১৯৯৪ সাল থেকে এ সংগঠনের কাজ শুরু হয়। ইংরেজিতে এই সংগঠনের পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে North American Free Trade Agreement (NAFTA).

 

৬। BIMSTEC: বঙ্গোপসাগরের এলাকার দেশগুলি একটি আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৯৫ সালে কয়টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় BISTEC.

 


৬। BIMSTEC: ১৯৯৭ সালে এই সংগঠনে মায়ানমার যোগদান করলে এই সংগঠনের নাম চেঞ্জ হয়ে BIMSTEC হয়ে যায়।

বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা থাইল্যান্ড ইকোনমিক। ২০০৩ সালে নেপাল ও ভুটান এই সংগঠনে যোগদান করে। নেপাল, ভুটান ও থাইল্যান্ড এই তিনটি দেশ বঙ্গোপসাগর এলাকায় বহির্ভূত। ২০০৪ সালে নেপাল ভুটান এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটির পরিপূর্ণ নাম পরিবর্তন হয়ে যায়। Bay of Bengal Institute for Multisectoral Technical cooperation.

 

৭। APEC: আশির দশকে আমেরিকা বিশ্ববাণিজ্যের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করত।১০৮০ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ইরাক ইরান যুদ্ধের কারণে আমেরিকা বিশ্ববাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ নেমে। তখন অর্থনীতিবিদ(Freed)কে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে অর্থনৈতিক আধিপত্য ফিরিয়ে আনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

 আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য এই কমিটি আমেরিকাকে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় জোট গঠনের জন্য পরামর্শ দিল। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বব হক। এর কাছে আমেরিকা শুনল বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২১। বব হকের পরামর্শে ১৯৮৯ সালে এই সংগঠনটি গঠিত হয়। এটির সদরদপ্তর সিঙ্গাপুর সিটি তে।

 

৮। TPP: ২০১৫ সালে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ১২টি দেশ নিয়ে এই সংগঠন গঠন করেছিলেন। এটির পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে Trans Pacific partnership (TPP). ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এটি বাতিল করেন।

 

Tariff: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অন্য দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে গেলে যে ট্যাক্স ঐ দেশকে দিতে হয় সেটাকে বাংলায় শুল্ক ইংরেজিতে Tariff বলা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে কোন একটি দেশ যদি বিশেষ শুল্ক সুবিধা পায় তবে তাকে GSP বলে।

 

আজকের পর্ব এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে দক্ষিণ এশিয়া কাশ্মীর ক্রাইসিস নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন! নিরাপদে থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post