এশিয়া মহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান: পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এশিয়া মহাদেশ অবস্থিত। এই মহাদেশের উত্তরে ইউরোপ মহাদেশ, দক্ষিণ ভারত মহাসাগর, পূর্বদিকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং পশ্চিম আফ্রিকা মহাদেশ অবস্থিত। তবে আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সাথে এটির কোন স্থল-সীমান্ত না থাকলেও নৌযোগাযোগের মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে থাকে। কিন্তু এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে কোন জলরাশি নেই। বরং স্থল ভাগ দ্বারা সংযুক্ত। এজন্য ভূ-রাজনীতিবিদরা ইউরোপ ও এশিয়া কে একত্রে ইউরেশিয়া বলে ডাকে। এ কারণে ইউরোপ ও এশিয়া যে সুবিধা ভোগ করে থাকে তাকে হার্ভাটিয়া বলে।
এশিয়া থেকে ইউরোপ: এশিয়া থেকে ইউরোপে রেলপথের মাধ্যমে যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ করছে।এর মাধ্যমে আগামীতে এশিয়া এবং ইউরোপে বাণিজ্য যোগাযোগ সহজতর হবে। এই প্রকল্পের নাম ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (One Belt One Road)। চীনের এই অবকাঠামোতে নেপাল সংযুক্ত হওয়ার জন্য এবং চীনের বন্দর ব্যবহার করার জন্য সম্প্রতি নেপাল-চীন নৌপ্রটোকল স্বাক্ষর করে। নিকটবর্তী সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব ২৬০০ কিলোমিটার।
এশিয়ার ভৌগলিক অর্থনীতি: এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জলরাশি রয়েছে। যা প্রাকৃতিক সম্পদ নীল অর্থনীতি এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এজন্য এসব করার জন্য জলরাশি কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। যেমন চীনের পূর্বদিকে পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ চীন সাগর, আবার ইরাক-ইরান তীরবর্তী শাত-ইল-আরব চীনের পাশে রয়েছে।
নেপাল কমিউনিকেশন: এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ জলরাশির মধ্যে অন্যতম জলরাশি হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। জানিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। কারণ জলরাশির বাংলাদেশ অংশে নীল অর্থনীতি বেশি থাকায় ভারত এই উপসাগরের সীমানা পরিবর্তন করে নিজেদের করতে চেয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমুদ্র আদালতে ১৯৮২ সালে সমুদ্র আইন অনুযায়ী মামলা করে জয়লাভ করে এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য চীন থেকে দুটি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ ক্রয় করে। জাহাজ দুটির নাম হচ্ছে জয়যাত্রা এবং নবযাত্রা।
এশিয়ার দেশগুলো শাসিত হওয়ার কারন: এশিয়া মহাদেশের প্রায় সকল দেশেই ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল। এই জন্য পশ্চিমা দেশ সমূহ এশীয় অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ এই মহাদেশের সকল দেশের বিভিন্ন বিষয় যেমন জাতিগত দ্বন্দ্বে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বিচ্ছিন্নতাবাদ এ আন্দোলন ইত্যাদি বিষয়ে ব্রিটিশরা জানত।
ইরাক ও ইরান যুদ্ধ: পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালী এবং টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মিলনস্থল শাত-ইল-আরবকে কেন্দ্র করে ইরান এবং ইরাকের মধ্যে আট (১৯৮০ থেকে ১৯৮৮) বছর ধরে যুদ্ধ হয়। ১৯৮৮ সালে আলজিয়ার্স চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ শেষ হয়।
দক্ষিণ চীন সাগর কে কেন্দ্র করে কোরিয়া, জাপান এবং ভিয়েতনাম এর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। কারণ এই সাগরের মালিকানা এই তিন দেশের হলেও ২০১৫ সালে চীন এককভাবে এর মালিকানা দাবি করে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করে। জাপান সাগর এবং পীত সাগর এর মাঝে কোরিয়া উপদ্বীপ অবস্থিত। জাপান সাগরের তীরবর্তী রাশিয়ার বন্দর ও নৌঘাঁটির নাম 'ব্লাদিভস্টক'। এরই পাশে রাশিয়ার দুটি দ্বীপ রয়েছে যার একটির নাম শাখালিন অন্যটির নাম কুড়িল। এই দ্বীপ দুটি নিয়েও জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের দেশসমূহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্বাধীন হয়েছে। এজন্য স্বাধীনতার পর থেকেই তারা স্নায়ুযুদ্ধ দ্বারা প্রবাহিত হচ্ছে। এজন্য আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা পূর্বেও ছিল এখনও আছে। স্নায়ু যুদ্ধের সময় আমেরিকা এশিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি সামরিক জোট তথা সেনটো এবং সিয়াটো গঠন করে। এবং পাশাপাশি একটি আঞ্চলিক জোট আশিয়ান গঠন করে। প্রথম দুটি উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা ব্যবহার করা। আশিয়ান তৈরির উদ্দেশ্য ছিল আর্থসামাজিক সহযোগিতা করা। কিন্তু রাশিয়ার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়ার দেশ গুলি স্বাধীন হলে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়। এরপরে এশিয়ান রিলেশন কনফারেনস অনুষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত ও পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেয়ার সময় কাশ্মীর নামক জায়গাটি কাউকে প্রদান করেনি বলে ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত-পাকিস্তান দন্দের শুরু হয়। এই দুই দেশের মধ্যে মোট তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।
সীমান্ত সমস্য: এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা রয়েছে। যেমন: বাংলাদেশ ও ভারত এর মধ্যে, ভারত ও নেপালের মধ্যে, ইরাক ও ইরানের মধ্যে ইত্যাদি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জাতিগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। যেমন: শ্রীলংকা, ইন্ডিয়ার তামিল, চীনের উইঘুর, লেবাননের হারিরি, ইয়েমেনের হুথি, মায়ানমারের কারেন্ট ইত্যাদি।
সর্বশেষ আরেকটি দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করব। এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ পূর্বে ওশেনিয়া মহাদেশের অবস্থান। যার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের নৌ যোগাযোগ রয়েছে। এজন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সুবিধাসমূহ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভোগ করে থাকে। এখানে ফিলিপাইনে আমেরিকার উপনিবেশ থাকায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউএসএ এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল। যেটি ফিলিপাইনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। এজন্য ফিলিপাইনের নিকটবর্তী জলরাশিতে মার্কিন নৌঘাঁটি রয়েছে। যার নাম সুবিক রে।
আজকের পর্ব এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে দক্ষিণ এশিয়াতে চোখ রাখার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি। সবাই ভাল থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!
Post a Comment