মধ্য এশিয়া বা সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলো গুরুত্তপূর্ণ এবং দেশগুলোর নাম হচ্ছে কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান।

 


মধ্য এশিয়া: গত পর্বে আমরা পূর্ব এশিয়া বা দূর প্রাচ্য বা ফার ইস্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমরা মধ্য এশিয়া অর্থাৎ সেন্ট্রাল এশিয়া নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

 

দেশের সংখ্যা: মধ্য এশিয়াতে টোটাল দেশ হচ্ছে পাঁচটি। এই পাঁচটি দেশকে একটি শব্দ বা কৌশলের মাধ্যমে মনে রাখা সম্ভব। কৌশলটি হচ্ছে "K KUTTa (কে কুত্তা)"

 

K- কাজাখস্তান

K-কিরগিজিস্তান

U-উজবেকিস্তান

T-তুর্কমেনিস্তান

Ta-তাজিকিস্তান

 

মধ্য এশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান: এই অঞ্চলটির দক্ষিনে আফগানিস্তান ও ইরান, পূর্বে চীন ও মঙ্গোলিয়া, উত্তরে রাশিয়া, পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর।

 


দেশগুলোর রাজধানী: এই দেশগুলোর রাজধানীর সাথে একটু পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা অনেকেই মনে করি, বর্তমান পরীক্ষাগুলোতে রাজধানী থেকে তেমন প্রশ্ন করা হয় না। কিন্তু ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় মিনস্ক কোন দেশের রাজধানী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। উত্তর ছিল বেলারুশ। তাই মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর রাজধানীসহ সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করব। 

 

কাজাখস্তান: বিশ্বব্যবস্থা দ্বিমেরু থেকে পরিবর্তিত হয়ে যখন পুনরায় একমেরুতে পরিণত হয় অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যখন ১৫ টি রাষ্ট্রে পরিণত হয় তখন কাজাখাস্তান স্বাধীন হয়। সময়টা ছিল ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দেশটি রাষ্ট্রপতি দ্বারা শাসিত হয়। সরকার প্রধান কে হবেন সেটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে নবম স্থানে রয়েছে এই কাজাখস্তান। কাজাখস্তানের রাজধানী একটা সময় ছিল "আল মা আতা"। পরবর্তীতে সেই রাজধানী পরিবর্তন করে রাজধানীর নাম দেওয়া হল হলো "আস্তানা"। এখন বর্তমানে কাজাখস্তানের রাজধানী হল "নুর সুলতান"।

ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড: চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৩ সালে কাজাখস্তানে গিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য যে মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন সেই পরিকল্পনার নাম "ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড(OBOR)" রাখা হয়েছিল। বর্তমানে এটির নাম হচ্ছে "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ(BRI)"। মুসলিম বিশ্বে আয়তনে সবথেকে বড় দেশ কাজাখস্তান। এই কাজাখস্তানে প্রথম এবং সবথেকে বড় মহাকাশ উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে যেটির নাম হচ্ছে বাইকনুর কসমোড্রোম। পৃথিবীর সবথেকে বড় হ্রদ "কাস্পিয়ান সাগর" এর কিছু অংশ কাজাখস্তানের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

 

কিরগিজস্তান: কিরগিজস্তানের রাজধানী কোথাও লেখা আছে বিশকেক আবার কোথাও লেখা আছে বিশবেক। কিন্তু গুগলের সঠিক তথ্য মতে কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক (বিশ টুকরা কেক)।

১৯২৪ সালে স্বায়ত্তশাসিত দেশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৩৬ সালে একটি প্রজাতন্ত্র দেশ হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করে। তখনো সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে যখন ১৫টি দেশে পরিণত হয় তখন কিরগিজস্তান স্বাধীনতা লাভ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। স্বাধীনতার ঠিক দুই বছর পরে ১৯৯৩ সালে সংবিধান প্রণয়ন করে দেশটি।

 

উজবেকিস্তান: উজবেকিস্তানের রাজধানী হচ্ছে তাসখন্দ। এই তাসখন্দে ১৯৬৬ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই চুক্তির মধ্যস্থতাকারী দেশ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সেই চুক্তির নাম হচ্ছে তাসখন্দ চুক্তি। তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ১০ জানুয়ারি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ভারতের মধ্যে সংঘটিত দ্বিতীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন পৃথিবীর ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ঠিক তখনই উজবেকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। সময়টি ছিল১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট। তার ঠিক একদিন পরে অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিন উজবেকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে।

 

তুর্কমেনিস্তান: তুর্কেমেনিস্তানের রাজধানী হচ্ছে আশখাবাদ।

 

তাজিকিস্তান: তাজিকিস্তানের রাজধানী হচ্ছে দুশানবে।

 

বিশেষ বৈশিষ্ট্য: মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। ১৯২২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক একটি বিশাল দেশ ছিল। যেটি ১৯৯১ সালে চক্রান্তের শিকার হয়ে ১৫টি ভিন্ন ভিন্ন দেশে বিভক্ত হয়ে যায়। যার একটি হচ্ছে বর্তমান রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ ঐ ১৫ টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। 

 

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। আগামী পর্বে  মধ্য প্রাচ্যের একটা অঞ্চল হচ্ছে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলের দেশ গুলোর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ!

 

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post