দক্ষিণ এশিয়া বা সাউথ এশিয়া থেকে বিসিএস সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সার্ক (SAARC), কাশ্মীর, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।

 


দক্ষিণ এশিয়া (সাউথ এশিয়া): গত পর্বে এশিয়া মহাদেশ নিয়ে আলোচনা করে হয়েছিলো। এই পর্বে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এই দক্ষিণ এশিয়াতে মোট দেশ আছে আটটি এবং এই আটটি দেশ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটির নাম হচ্ছে সার্ক (SAARC)।

 

সার্ক (SAARC): দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিয়ে ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে সার্ক যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সর্বশেষ দেশ হিসেবে আফগানিস্তান যোগদান করে। তাই সার্কের বর্তমান সদস্য দেশ হচ্ছে আটটি। সেই আটটি দেশ হচ্ছে-


১। মালদ্বীপ,
২। বাংলাদেশ,
৩। আফগানিস্তান,
৪। ইন্ডিয়া,
৫। শ্রীলংকা,
৬। ভুটান,
৭। নেপাল এবং
৮। পাকিস্তান।

 


এই ৮টি দেশ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-

১। মালদ্বীপ: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আয়তন এবং জনসংখ্যায় সবথেকে ছোট দেশ মালদ্বীপ। কিন্তু আয়তন এবং জনসংখ্যায় মালদ্বীপ ছোট হলেও এর শিক্ষার হার ও মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি এই মালদ্বীপে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে।

 

২। বাংলাদেশ: এই দেশকে নিয়ে অনেক ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই দেশকে বলা হয় নীরব খনির দেশ। কারণ কিছুদিন পরপর এদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান মেলে।

 

৩। আফগানিস্তান: আফিম উৎপাদনে বর্তমান বিশ্বে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে আফগানিস্তান। এবং পূর্বে বলেছি দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ আফগানিস্তান এবং এটি সার্কের সর্বশেষ সদস্য দেশ। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য পদ লাভ করে।

 

৪। ইন্ডিয়া: পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হচ্ছে ইন্ডিয়া এবং পাশাপাশি আয়তন ও জনসংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় দেশ চীন। ইন্ডিয়া থেকে আয়তন ও জনসংখ্যায় বড় দেশ হলেও চীনে গণতন্ত্র নাই। এজন্যই চীনকে গনতান্ত্রিক দেশ বলার সুযোগ নাই। ইন্ডিয়া স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েচিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। মুসলিম হিসেবে ইন্ডিয়ার ১ম রাষ্ট্রপতি ছিলেন জাকির হোসেন। প্রতিভা পাতিলের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি যিনি ইন্ডিয়ার ১ম মহিলা রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৩তম রাষ্ট্রপতি যিনি ছিলেন তিনি হচ্ছেন প্রণব মূখার্জি। পাঠ উৎপাদনে পৃথিবীতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারত। ১৯৭৪ সালে পারমানবিক বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছিলো ভারত। ভারতকে বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরাশক্তির রাষ্ট্র এবং এই রাষ্ট্রটি ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি রাষ্ট্র থেকে বৈশ্বিক পরাশক্তির রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হতে চাচ্ছে। আমরা জানি ভারতের কেন্দ্র সরকার এবং প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এইজন্য ভারতের সরকার ব্যবস্থাকে বলা হয় ফেডারেল ফর্ম অফ গভট।



বর্তমান ভারতের রাজ্য(২৮) ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল(৮) যেভাবে হলো: ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে একটি রাজ্য ছিল, যার নাম হচ্ছে জম্মু কাশ্মীর। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহ দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির একটি অধ্যাদেশ পড়ে শুনিয়েছিলেন, সেখানে বলা ছিলো- জম্মু কাশ্মীর এখন থেকে আর কোন রাজ্য নয়। এ রাজ্যটির বিশেষ মর্জাদা বাতিল করা হলো। জম্মু কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হবে। যার একটির নাম থাকবে জম্মু কাশ্মীর এবং অন্যটি নাম হবে লাধাক।.৩১ অক্টোবর ২০১৯ সালে এই আইন পাশ হয়। এই কারনে রাজ্য একটি কমে হয়ে যায় ২৮টি। নতুন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হয় ২টি।

এবার কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের সঠিক সংখ্যা – ২৬ জানুয়ারী ২০২০ সালে ভারতের ৭টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল এর মধ্য থেকে “দমন ও দিউ” এবং “দাদরা ও নাগর হাভেলি” দুইটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে  একত্রিত করে একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করলে ৬টি হয়ে যায়। বর্তমানে ৬+নতুন ২ = ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল রয়েছে ভারতে। 

 

৫। শ্রীলংকা: শ্রীলংকার একটা তথ্য আমাদের একটু জানা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীলংকায়। যিনি ১৯৬০ সালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার নাম হচ্ছে শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে।

 

৬। ভুটান: ভুটান হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ধূমপানমুক্ত দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বনভূমি রয়েছে এই ভুটানে। যদিও একটি দেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বনভূমি প্রয়োজন ২৫%। সেখানে ভুটানের রয়েছে ৭০% বনভূমি (উইকিপিডিয়া)। ভুটানই বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই তারিখটা কে আরো ঐতিহাসিক করতে ৬ ডিসেম্বর ২০২০ সালে বাংলাদেশে ভুটানের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। চুক্তিটির নাম প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (PTA) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে বাংলাদেশের ১০০ টি পণ্য বিনা শুল্কে ভুটানে প্রবেশ করতে পারবে এবং ভুটানের ৩৬ টি পণ্য বিনাশুল্কে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকার আরো বলেছেন যে ভুটান চাইলে বাংলাদেশের তিনটি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। প্রথমটি হচ্ছে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর দ্বিতীয়টি চট্টগ্রাম বন্দর এবং তৃতীয়টি মংলা বন্দর। প্রয়োজনে ভুটান বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে যে বিমানবন্দরটি আছে সেটি ব্যবহার করতে পারবে।

 


৭। নেপাল: এই দেশে ২৪০ বছর রাজতন্ত্র ছিল। সম্প্রতি ২০০৮ সালে এদেশে গণতন্ত্র চালু হয়। এই নেপাল একটা সময় পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু দেশ ছিল। কিন্তু পৃথিবীতে এখন আর কোন হিন্দু দেশ নাই। নেপাল এখন ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশ। আর যেহেতু হিমালয়ের অধিকাংশ নেপালে অবস্থিত তাই নেপালকে হিমালয়ের কন্যা বলা হয়।

 

৮। পাকিস্তান: মুসলিম বিশ্বের জনসংখ্যার দিক দিয়ে পাকিস্তান দ্বিতীয়। পাকিস্তান ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে।

 

আজকে এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post