দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়টি সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি তে ব্যাপক অবদান রাখছে। সাউথ ইস্ট এশিয়া।

 


দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া (সাউথইস্ট এশিয়া): এ পর্বে আমরা সাউথইস্ট এশিয়া নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আমরা জানি, এশিয়া মহাদেশে যতগুলো অঞ্চল রয়েছে, সেই অঞ্চল গুলোর মধ্যে পূর্ব-এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বর্তমান সময়ে অর্থনীতিতে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। সেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে টোটাল দেশ আছে ১১টি। ১১টি দেশের মধ্যে একটি দেশ ছাড়া বাকি দশটি দেশ নিয়ে এখানে একটি আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে ওঠে ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট। সংগঠন টির নাম হচ্ছে আসিয়ান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি দেশ আসিয়ানের সদস্য হলেও যে একটি দেশ আসিয়ানের সদস্য নয় সেই দেশটির নাম হচ্ছে পূর্ব তিমুর। যে দেশ ২০০২ সালে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। আর তখনই এক নতুন ইতিহাস এর জন্ম নেয়। তা হল পূর্ব তিমুর এশিয়া মহাদেশের সর্বশেষ স্বাধীন দেশ। ১১টি দেশ হচ্ছে 


১। পূর্ব তিমুর,
২। থাইল্যান্ড,
৩। ভিয়েতনাম,
৪। ফিলিপাইন,
৫। ইন্দোনেশিয়া,
৬। লাওস,
৭। মায়ানমার,
৮। মালয়েশিয়া,
৯। ব্রুনাই,
১০। কম্বোডিয়া এবং
১১। সিঙ্গাপুর

এই ১১টি দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবো- 

 


১। পূর্ব তিমুর: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্বশেষ স্বাধীন দেশ পূর্ব তিমুর। এশিয়ার মধ্যেও সর্বশেষ স্বাধীন দেশ এটি। প্রশান্ত মহাসাগরে ইন্দোনেশিয়া ও অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে পুর্ব তিমুর এর অবস্থান। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে পর্তুগাল অনেক বছর পর্যন্ত শাসন করেছিলো অর্থাৎ পর্তুগালের কলোনি ছিলো। পরবর্তিতে ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলে ইন্দোনেশিয়া অভিযান চালিয়ে দখল করে নেয়। এরপর শুরু হয় দেশটির অধিবাসিদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন। এ কারনে দ্বীপটির জনগন এক হয়ে  ইন্দোনেশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে আন্দোলন আরো তীব্রতর হয়। অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করার পর ১৯৯৯ সালের ৩০ আগষ্ট ইন্দোনেশিয়ার নিকট থেকে মুক্তি পায়। জাতিসংঘ পূর্ব তিমুরে গণভোটের আয়োজন করে। সেখানে মোট ভোটের আটাত্তর দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট যায় স্বাধীনতার পক্ষে। বাকি একুশ দশমিক পাঁচ শতাংশ যায় স্বাধীনতার বিপক্ষে। স্বাধীনতার পক্ষ জয়লাভ করে। পূর্ব তিমুর জাতিসংঘের ১৯১তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে। 

 

২। থাইল্যান্ড: এই দেশটির পূর্ব নাম শ্যামদেশ। থাইল্যান্ডকে বলা হয় সাদা হাতির দেশ বা প্যাগোডার দেশ। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্যাগোডা আছে এই থাইল্যান্ড এ। তবে সোনালি রঙ এর প্যাগোডা আছে সবচেয়ে বেশি মায়ানমারে। একারনে মায়ানমার কে বলা হয় সোনালি প্যাগোডার দেশ। প্যাগোডা হচ্ছে বৌদ্ধদের উপাসনালয়। 

ভৌগোলিক অবস্থান: থাইল্যান্ড এর উত্তরে লাওস, পূর্বে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ-পূর্বে কম্বোডিয়া, পশ্চিমে মায়ানমার। দেশটির দক্ষিণ দিকটা দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। থাইল্যান্ড পূর্বে কোন দেশের উপোনিবেশ ছিলোনা। ১৭৮২ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত যে রাজবংশ দেশটিকে শাসন করেছে সেটির নাম হচ্ছে চক্রী। তারপরে একটি অভ্যুত্থান এর মাধ্যমে শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র চালু হয়। 

 

৩। ভিয়েতনাম: ১৯৫৪ সালে ১৭ অক্ষাংশ বরাবর ভিয়েতনাম দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। যার একটি হচ্ছে উত্তর ভিয়েতনাম অন্যটি হচ্ছে দক্ষিণ ভিয়েতনাম। ফলে ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামে ২০ বছর ব্যাপী যুদ্ধ হয়েছিলো। যে যুদ্ধের নাম ছিলো ভিয়েতনাম যুদ্ধ। যুদ্ধে ভিয়েতনামের কাছে মার্কিন বাহিনী পরাজিত হয় এবং ভিয়েতনাম ছেড়ে চলে যায়। ১৯৭৬ সালের ২ এপ্রিল উত্তর ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ ভিয়েতনাম আবার একত্রিত হয়ে যায়।

ভৌগোলিক অবস্থান: ভিয়েতনাম এর উত্তর দিকে রয়েছে চীন, পূর্বে রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগর, দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর এবং পশ্চিমে কম্বোডিয়া অবস্থিত।  


৪। ফিলিপাইন: ধান রপ্তানিতে ১ম দেশ ফিলিপাইন। এই দেশে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে যেটি ১৯৬০ সালি প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়ার ১ম মহিলা প্রেসিডেন্ট এই ফিলিপাইনের। তিনি হচ্ছেন কোরাজন একুইনো। ম্যানিলা বিমান বন্দরে গুলিতে স্বামীর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে বিরামহীন ৩ বছর আন্দোলন করে ২৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট এর পদ গ্রহণ করেন। "সুবিক বে" হচ্ছে ফিলিপাইনে অবস্থিত সাবেক আমেরিকার নৌঘাটি। ১৯৯১ সালে ফিলিপাইনের কাছে হস্তান্তর করে আমেরিকার নৌবাহিনী চলে যায়।

 

৫। ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়া হল্যান্ড অর্থাৎ নেদার্ল্যান্ডের উপোনিবেশ ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৯ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। সুকর্ণ ১ম রাষ্ট্রপতি হন ইন্দোনেশিয়ার। মেঘবতী ছিলেন সুকর্ণের কন্যা। মেঘবতী ছিলেন মুসলিম বিশ্বের ১ম নারী প্রেসিডেন্ট। রাবার ও পাম উৎপাদনে বিশ্বে ১ম। ইন্দোনেশিয়াকে হাজার দ্বীপ এর দেশ বলা হয়। 

 

৬। লাওস: এই দেশটির উত্তর দিকে চীন, উত্তর-পূর্ব ও পূর্বে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে থাইল্যান্ড। 

 

৭। মায়ানমার: মায়ানমারের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের। আরাকান অঞ্চলে কিছু মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকলেও সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনের কারনে ২০১৬-২০১৭ সালে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এরা রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত। ১৯৮২ সালের মায়ানমারের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নাই।

অং সান সুচির নেতৃত্বে মায়ানমার ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। অং সান সুচি ছিলেন মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা কারন তিনি মায়ানমারের নাগরিক না হওয়ার কারনে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নাই। প্রথম ১৯৬২ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত সামরিক শাসন ছিলো দেশটিতে। তিনি ১৯৮৯ সালে বন্দি হন এবং ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেও ক্ষমতা পান নি। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান এবং গৃহবন্দি থেকে ১৩ নভেম্বর ২০১০ সালে মুক্তি পান। ৮ নভেম্বর ২০১৫ সালে ভোটে জয়লাভ করে এবং স্টেট কাউনসিলর পদ গ্রহণ করেন। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী আবার সামরিক অদ্ভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবার গৃহবন্দি হয় এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে।  


৮। মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়া ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৫৭ সালে এবং স্বাধীনতার পেছনে সবথেকে অবদান যে ব্যক্তির তিনি হচ্ছেন ডক্টর টেঙ্কু আব্দুর রহমান। মুসলিম বিশ্বের সংগঠন ওআইসি এর ১ম মহাসচিব ছিলেন এই টেঙ্কু আব্দুর রহমান। এখন বিনিয়গের জন্য নীতিমাল শিথিল করেছে মালয়েশিয়া। এ কারনে অনেক দেশ বিনিয়গের জন্য সেকেন্ড দেশ হিসেবে মালয়েশিয়াকে সিলেক্ট করতেছে। এ জন্যই মালয়েশিয়াকে "সেকেন্ড হোম" বলা হয়।

 

৯। ব্রুনাই: দেশটির উত্তর দিকে দক্ষিণ চীন সাগর, দক্ষিণে বর্নিও দ্বীপ,পূর্বে সেলিবিস সাগর, পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে জাভা সাগর।

১০। কম্বোডিয়া: উত্তরে থাইল্যান্ড ও লাওস, পূর্বে ও দক্ষিণ পূর্বে ভিয়েতনাম, দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর।

 আজকে এই পর্যন্তই। আগামী পর্বে ইস্ট এশিয়া বা পূর্ব এশিয়া বা দূর প্রাচ্য নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন ! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post